একাকিত্বের অন্তরালে || পর্ব ৪ || EKAKITTER ONTORALE-4 by Fahim Rifat

চৈত্রের দাবদাহ বাইরে এর মধ্যেই সাকিব আজকে দাবি করলো “চল বাইরে কিছুক্ষন ঘুরে তারপর বাসায় ফিরিবো”..
.
রোদ, বৃষ্টি, ঝড় সে যাই হোক বাইরে ঘোরায় আমার না নেই। এসব অনিয়ম করার জন্য মায়ের হাতে মার খেয়েছি বেশ কয়েকবার। তাতে কি? এটাই তো মার খাওয়ার বয়স নাহলে বড় হয়ে আফসোস করবো কি নিয়ে?

আমি সাকিবকে নিয়ে এলাকার আশেপাশেই ঘুরতে লাগলাম। ও যে আসলে এই এলাকার কোনো ওলিগলিই চিনে না তা বুঝতে আমার খুব একটা দেরি হলো না। একটু চিপা গলি দেখলেই ভয়ে তার অবস্থা শেষ বাসায় ফিরতে পারবে তো এই চিন্তায় কপালে ঘাম এসে যাচ্ছে। বেশ ভরসা দিয়েই ওকে নিয়ে হাটতে লাগলাম। সাকিবের আবার আমার ওপর ভরসা আছে তাই আর কিছু বলছে না।
..
বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা পৌর ভবনের সামনে গিয়ে উঠলাম। মোফাশশল শহরে নাকি সিটি কর্পোরেশন থাকে না, পৌরসভা থাকে এর সত্যতা কতটুকু আমার জানা নেই তবে লোকমুখে শুনেই বিশ্বাস করি এক রকম।
.
পৌরসভার সামনে একজন ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের যেতে দেখে ভিক্ষা চাইলেন। আমি ভাবতে লাগলাম লোকটার কি মাথায় ঘিলূ নাই নাকি??  আমাদের মত ৭ এ পড়া ছেলেদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে আমি কি ইনকাম করি নাকি?? পরক্ষনে ভাবলাম এতো বুদ্ধি লেশ নিয়া চললে তো তার আর পেট ভরবে না তাই হয়তো এসব ভুলেই গেছে সে। আমার পকেটে হাত দিয়ে একটা ১০ টাকার নোট পেলাম। আমার জন্য বাসা থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা বরাদ্দ টিফিনের টাকা। কোনোদিন খাই আবার কোনোদিন খাই না সেইটা থেকেই যায়। আজকে স্কুলে না যাওয়ার কারনে আজকের টাকাটাও রয়ে গেছে। সাকিবকে টাকা টা দিয়ে বললাম “ওনাকে দিয়ে দে” সাকিব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো ১০ টাকা দিয়ে দিবি তাই বলে??  
  • হ্যা দিব।
  • আচ্ছা দিচ্ছি।
টাকা টা পেয়ে লোকটার মুখে যেই হাসিটা দেখতে পেয়েছিলাম তা দেখে তখন ঐ চড়া রোদের মধ্যে দাড়িয়েও একটু শান্তি অনুভব করছিলাম। আসলেই মানুষকে সাহায্য করলে মানুষ কতই না খুশি হয়।
.
সাকিবও দেখি হাসছে। তবে হাহা করে নয়। যেই হাসি মানুষের মুখভঙ্গি অনেকটা উজ্জ্বল করে তোলে। একটা প্রশান্তির হাসি।
.
এরপর আবার আমরা হাটতে লাগলাম। এলাকার প্রায় সবগলি চক্কর দিতে আমাদের প্রায় দেড় ঘন্টা লেগে গেছে। সাকিবের আম্মা অর্থাৎ রাবেয়া আন্টি হয়তো এতক্ষনে অনেক চিন্তা করছেন। আমি সাকিবকে বললাম - চল আজকে আর ঘুরবো না বাসায় ফেরা যাক আন্টি হয়তো অনেক টেনশন করছে। সাকিব বললো- “হ্যা চল বাসায় ফিরি তবে হেটে যেতে পারবো না রিকশা নিয়ে যাই। আমার পা অনেক ব্যাথা করছে।”
আমি মনে মনে হাসলাম ওর কথা শুনে। রিকশা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম আমরা আর মনে পরতে লাগলো পৌরসভার সামনে ভিক্ষা করা লোকটার উজ্জ্বল হাসির কথা। আমারো মনে মনে হাসি পাচ্ছিলো আর ভালোও লাগছিলো।

পর্ব ৩ পড়তে এখানে... ক্লিক করুণ
সবসময় আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করূন অথবা Fahim Rifat পেজের লাইক বাটনে ক্লিক করে রাখুন।

Comments

Popular posts from this blog

Less is More : The way of Minimalistic Lifestyle

একজন মুমিনের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ

চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে