একটি বান্দরবান ভ্রমণকাহিনী - পর্ব ১



দিনটা ছিলো অক্টোবরের ২১ তারিখ। দিবাগত রাত। পরিকল্পনা মোতাবেক আমাদের বান্দরবান ভ্রমণ শেষ করে ঢাকা ফেরার কথা। অর্থসংগ্রহ এবং বাকি সকল প্রস্তুতি সেই পর্যন্তই। ১৬ তারিখ দিবাগত রাতে ভ্রমন শুরু হয়। এবারের ভ্রমণ সঙ্গী আমার মামাতো ভাই আর তার দুই4 বন্ধু, আর এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের আবার বাসে ভ্রমণে পোষায় না, তাই পূর্বে থেকেই ঠিক ছিলো ভ্রমণের এডভেঞ্চারই হবে বাইক ভ্রমণ। 

যথারীতি, রাতে বেরিয়ে একত্র হলাম সবাই মিরপুর ডেলটা মেডিকেল কলেজের অপজিটে যেহেতু আমরা সবাই ঢাকা মিরপুরের বাসিন্দা। ওখান থেকে বের হয়ে গাবতলির কাছাকাছি একটি পাম্প থেকে দুইটা বাইকের তেল ভর্তি করা হলো। আমাদের বাইক প্রতি ৮০০০ টাকার বান্দরবান ভ্রমনের প্রথমেই ১০০০টাকা শেষ। অবশেষে রাতে যাত্রা শুরু। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি রাতে অন্তত চট্রগ্রাম রোডে বাইক ভ্রমন বেশ রিস্কি একটা কাজ। প্রচুর পরিমানে ট্রাক, লড়ি চলতে থাকে রাতে তবে একটা ভালো দিক হচ্ছে সেইসব ড্রাইভাররা আবার আমাদের শহরাঞ্চলের ড্রাইভারদের মত ঘার ত্যাড়া না। আপনি পেছন থেকে হর্ন দিলে তারা সুযোগ আর সময় মত সাইড দিয়ে দিবে।  তাই তাদের সামনে যেয়ে বেশি ব্যস্ততা দেখিয়ে বার বার হর্ন না দেওয়া ভালো। এতে তারা বিরক্তিবোধ করতে পারে। 

ব্যাচেলর মানুষের একটা জিনিস কখনো ঠিক থাকে না আর সেইটা হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া। আমাদের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। ভ্রমণের উত্তেজনা এতোটাই মাথায় জেগে বসেছিলো যে খাওয়ার কথা মনেই ছিলো না আর রাত ১২ টায় আমাদের সাধ্যের মধ্যে কোনো হোটেল রেস্তোরা খোলা পাওয়া গেলো না। তাতে যে আমাদের কারোই খুব সমস্যা হচ্ছে তেমন না কারণ দুপুরের খাবার খাওয়া হয়েছে সন্ধ্যার সময়। 

ভ্রমনের শুরুতে কোনো ক্লান্তি কাজ করে না, তাই প্রথম থেকেই প্লান করে রাখা হলো যতদুর সম্ভব প্রথম ধাক্কায় পার হয়ে যাওয়া যায় ততদুর চলে যাবো। তবে একটা খসরা প্লান ছিল আমরা কুমিল্লাতে দাড়াবো যদি খাবার খাওয়ার কোনো জায়গা পাই। বাইক ভ্রমনের সময় একবার যাত্রা বিরতি নিলে এরপর কিছুদূর যেতে যেতেই মনে হয় শরীর ম্যাচ ম্যাচ করছে একটু যাত্রা বিরতী দরকার। আমদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নাই।

রাত তখন প্রায় পৌনে ২ টা আমরা গিয়ে পৌছালাম কমিল্লায়। বাজেট যেহেতু কম আমাদের সব কিছুই সামলাতে হচ্ছে সাধারণ মানের সব সার্ভিস দিয়ে।  খাবার বেলায়ও তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠলো। পথে যেখানে একটা হোটেল পেয়ে গেলাম সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লাম কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য। চক্ষে পড়লো এই রাতেও হোটেলে পরটার ব্যবস্থা আছে। দেখে ভালো লাগলো অল্প খরচে খাওয়াটা হয়ে যাবে।  

ব্যাচেলরদের হাতে টাকা থাকলে একটা বিষয়ে বিলাসিতা না করলে মনে প্রশান্তি আসে না। এরকমটা ভাবতে ভাবতে গ্রুপের একজন পাশের দোকানিকে বলে বসলো "মামা একটা কফি আর বেনসন..."  কথা শেষ না করতেই আরেজন বলে বসলো "আমার জন্যও অর্ডার দে" বেনসন হেজেসে টান দিতে দিতে বাইরে দাড়িয়ে দুইজন গল্প করতে লাগলো। তারমানে পরটা খাওয়ার ভাগিদার ২ জন কমে গেলো। "মামা পরটা কত করে?" 

"সিঙ্গেল ৫ টাকা ডাবল ১০ টাকা " 

"ডাবল সিঙ্গেলের হিসাব কি আবার?  দেও দেখি ২টা ডাবল ২টা সিঙ্গেল।"

সাথে ডাল সবজি আছে। প্রায় ১০ মিনিট পর ডাল-সবজি আর পরটা দিয়ে গেলো। খেতে গিয়ে টের পেলাম ডালটা হালকা টক হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শীতের শুরুর দিক তাই হয়তো একেবারে নষ্ট হয়ে যায় নাই তবে এটা আর বেশিক্ষন এভাবে রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে।  যাই হোক সেখানেই খাওয়া দাওয়া শেষ করা হলো। আবার যাত্রা শুরু 

ভাগ্যকুল - কুমিল্লার মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার এই একটা নাম জপতে জপতে যেতে হবে। মিস্টি হোক আর কনফেকশনারি কেকের দোকান হোক  সাইনবোর্ডে ভাগ্যকুল। বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় কম্পানি গুলো বাদে কোনো কিছুরই কপিরাইট ইস্যু নাই তাই যেকোনো নাম ভাঙিয়ে যে কেউ ব্যবসা করতে পারে। ব্যপারটা অনেকটা ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে হাজি বিরিয়ানীর মত সুন্দর করে কিছু সাফিক্স প্রিফিক্স লাগিয়ে দিলেই আর সমস্যা নেই ব্যবসা হালাল। কুমিল্লার রসমালাই আর ভাগ্যকুলের মিস্টির বেশ সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে যদিও ইদানিং কিছু বাস স্টপ পয়েন্ট, রেস্ট হাউজ এসবের কারণে যাত্রা বিরতী কুমিল্লাতে হওয়াতে ফেসবুকের মাধ্যমে অন্যরকম একটা বিদঘুটে জিনিস নিয়ে কুমিল্লার নাম বেশ পরিমাণে পচিয়ে ফেলেছে একদল দুষ্ট চক্র আর আমরা যেকোনো বিষয় পেলেই যে মেতে উঠি তার প্রমাণ আমরা সকল জায়গায় রেখে যাই। যাই হোক খাওয়া শেষ করে ভাগ্যকুলের ব্যানার দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম।

ঐযে বলেছিলাম যাত্রা বিরতী একবার দিলেই শরীর ম্যাচ ম্যাচ করে ঠিক তাই হলো আমাদের সাথে আমাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো তারণা আর এর মধ্যে ঘুমও বেশ সমস্যা করছিলো এজন্য ২০-২৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে না হতেই যাত্রা বিরতী দিয়ে চা খেতে হচ্ছিলো। এরমধ্যে একবার আমার মামতো ভাই বলে বসলো পান খেলে নাকি আর ঘুম আসে না। বিষয়টা যে একেবারে ভুয়া তা না রাতের বেলায় বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা এভাবে পান খেয়ে গাড়ি চালায়। এখানে আসলে পানের কোনো বিশেষত্ব নেই। আপনি মুখে নিয়ে কিছু চাবাতে থাকলে দেখবেন ঘুম চলে যায়।  ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম ভাবেই কাজ করে। পান বেশ লম্বা সময় ধরে চাবানো যায় আবার বিরক্তিও আসে না। একারনেইই পান নিয়ে চিবানো শুরু করে দিলাম আমরা। 

রাস্তার মাইলস্টোনে চোখে পড়লো ফেনি ১২৮ কিলোমিটার। কুমিল্লা পার হলেই ফেনি। আমাদের যাত্রা বিরতি দিতে দিতে এই ১২৮ কিলোমিটার যেতে বেশ সময় ক্ষ্যাপন হলো। আমরা যখন ফেনির মাটিতে প্রবেশ করলাম তখন ফযরের আজান দিয়ে দিয়েছে। চিন্তা ভাবনা করলাম এখানে বিরতি নিয়ে নামাজ পড়ে আবার রওনা দিবো। 

কিছুদুর পার হয়েই রাস্তার পাশে একটা মসজিদ পেয়েও গেলাম.........



Comments

Popular posts from this blog

Less is More : The way of Minimalistic Lifestyle

একজন মুমিনের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ

চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে