একাকিত্বের অন্তরালে || পর্ব ২ || EKAKITTER ONTORALE by Fahim Rifat


কখন যেনো সাকিব বাসায় এসে গেছে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেই আমাকে দেখে তো অবাক ...।
- কিরে এতোদিন পর কোন গর্ত থেকে বের হইলি?
- আরে বলিস না মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম। অনেকদিন হলো যাওয়া হয়নাই তাই ঘুরে আসলাম একটু।
- আমাকে বলতে পারতি তুই যাচ্ছিস। তাহলে আমি যেতাম ।
আমিও একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আসলেই তো আমি ইছা করলেই ওকে সাথে নিয়ে যেতে পারতাম। সাকিবের বাবা আব্দুল গফফার সাহেব রাজি না হলেও আন্টি কোণোভাবে ম্যানেজ করে নিতেন। নিতান্তই একটা ভুল করে ফেলেছি তাই আর সাকিবের এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রেক্ষাপট পাল্টানোর চেষ্টা করলাম।
- তুই বাইরে গেছিলি কেনো?
- ডাল কিনতে পাঠাইছিলো, আম্মা।
- ও আচ্ছা। তা তোর দিনকাল কেমন কাটছে?
- কাটছে সময় ঐ একইরকম। তবে জানিস বাবা এই মাসে একটা গিটার কিনে দিয়েছেন কিন্তু এখনো বাজাতে পারি না।
- কই দেখি নিয়ে আয় তো আমি চেষ্টা করি।
ভবঘুরে টাইপ মানুষ আমি প্রতিদিনই প্রচুর মানুষের সাথে মেশা হয়। অনেক কিছু শেখাযায় মানুষের সাথে মিশলে। সেভাবেই একবার স্কুল ছুটির পর পার্কে দিয়ে হাটছি। দেখি এলাকার এক বড় ভাই গীটার নিয়ে টুং টাং করছে। আমি এতটাই এক্সট্রোভার্ট টাইপ ছিলাম যে ভাই কে গিয়ে বললাম দেন ভাই আমি পারি গীটার বাজাইতে একটু বাজাই। ভাই ঠিকই জানতো আমি পারি না কিন্তু আমাকে চেনার কারণে ঠিকই দিলেন। কারণ না দেওয়া পর্যন্ত তার পিছু ছাড়বো না ভালো করেই জানতেন। ঐদিনই তিনি আসলে  ........ তুম হি হো /......... গানের গীটার কর্ড আমাকে দেখিইয়ে দিয়েছিলেন। ঐ একটাই পারি। আমার আবার কোনো বিষয়ে আগ্রহ খুব কম তাই কোনো জিনিস গভীরভাবে শেখা হয় না। ইচ্ছাও নাই শেখার সবকিছু একটু একটু করে জানার মধ্যে আলাদা মজা আছে। মানূষকে বেশ বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়।
-এই নে গিটার কি বাজাতে পারিস দেখি।
আমি যে একটা কর্ড পারতাম সেইটাই নানাভাবে ঘুরিয়ে পেছিয়ে বার বার বাজাচ্ছি সাকিব তাতেই মনে করলো আমি মনে হয় বেশ ভালো বাজাতে পারি। মানুষের মনে বিশ্বাস খুব খারাপ জিনিস একবার বিশ্বাসের জায়গা কেউ দখল করে নিলে তার প্রতি অবিশ্বাস জন্মানো অনেক কঠিন একটা কাজ। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। কিছুক্ষন এসব করার পর সাকিবকে বললাম চল ছাদে যাই পাশের বস্তির ছেলেপেলেগুলো ঘুরি ওড়াচ্ছে ওদের থেকে একটা ঘুরি নিয়ে ওড়াবো। সাকিব একবাক্যে না বলে দিলো। কারণ আর জানতে চাইলাম না কেননা ও যে একটা ফার্মের মুরগী এটা আমি আগে থেকেই জানি কড়া রোদে কিছুক্ষন থাকলেই ঠাণ্ডা গরম লেগে জ্বরে পড়ে থাকবে তাই আমিও আর খুব একটা জোড় করলাম না।
-আমি আর থেকে কি করবো যাই তাহলে আজকে এই বলে ঊঠে পড়লাম।
- কিছুক্ষন দাড়া আসছি।
এই বলে ও রান্নাঘর থেকে আন্টিকে ডাকতে যাবে বুঝতে পারিনি। আন্টি এসেই একটা ধমক দিলেন – “এতোদিন পর এসেছো আবার চলে যাবে মানে কি? দুপুরে খেয়ে তারপর যাবে” আমি আর কিছু বলতে পারলাম না কিন্তু মনে মনে অনেক হাসি পাচ্ছিলো কারণটা আমাকে থাকতে বলা হয়েছে তার জন্য না। আমি সাকিবের বন্ধু সাকিব নিজেই যে আমাকে জোড় করে থাকার কথা বলবে এটুকুও ছেলেটা পারে না। মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে চিন্তা হতো এই ঝঞ্ঝালের শহরে এতো সাধাসিধা মানুষ কিভাবে জীবন পার করবে?

দুপুরের খাবার তৈরী আন্টি খাবার টেবিলে ডাকলেন সবাইকে সাকিব আর আমি টেবিলে গেলাম। আন্টি পাবদা মাছ হালকা মসলা দিয়ে একটু তেল বেশী দিয়ে ভুনা করেছেন আর সাথে আন্টির হাতের স্পেশাল ডাল। স্পেশাল বলার কারণ হলো আমি এইরকম ডালের স্বাধ আর কখোনো পাই নাই। খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন পর আমি আবার বেরিয়ে পড়লাম। আমার আবার একটা টিউশনি আছে। এতো ছোট বয়সে আবার কিসের টিউশনি? হ্যা আমি ক্লাস ওয়ানের একটা বাচ্চাকে পড়াইতাম তেমন কোনো সম্মানীর জন্য না আমার বোনের বান্ধবীর ভাই তার কাছে পড়ে না বলে আমি বিকালে তাদের বাসায় গিয়ে পড়াই। পিচ্চিটা বেজায় ফাজিল আছে পড়াশুনা করে না কিছুই আমার সাথে ফাযলামি করে। কারণ ছোটবেলা থেকেই ও আমাকে ভাইয়া হিসাবে চিনতো এখন স্যার হিসাবে তাই মানে না। আমিও মানানোর চেষ্টা করি না কারণ পড়াশুনা হলো মজার বিষয় মজা না থাকলে পড়াশুনা করে কি লাভ?? পড়াতে গিয়ে হঠাত আজকে সাবরিন আপুর সাথে দেখা। সাবরিন আপু হলো আমার বোনের বান্ধবি আর আমার ছাত্রের বোন।
-কিরে রিফু কেমন আছিস?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপু আপনি কেমন আছেন?
-ভালো আছিরে। তা তোর ছাত্রের কি খবর?
-ছাত্রের খবর তো ভালোই তবে আপু আমার একটা রিকুয়েস্ট ছিলো যদি রাখেন খুব খুশি হবো।
-কি হইছে বলে ফেল এতো ইতস্তত করছিস কেনো?
-আপু আমার একটা বন্ধু আছে সাকিব নাম করে আমি চাচ্ছিলাম সাজিদকে যদি ও এসে পড়ায় তাহলে খুব ভালো হইতো।
-কিরে তোকে সম্মানি দেওইয়া হয় না বলে মন খারাপ করেছিস নাকি?
- আরে কি যে বলেন আপু। সাজিদকে তো আমি নিজের ছোট ভাইয়ের মত করেই পড়াই কিন্তু সাকিবের আসলে একটা টিউশনি দিলে ওর একাকিত্ব কাটতো ওকেও টাকা দেয়া লাগবে না শুধু বাসায় এসে পড়িয়ে যাবে।
-আচ্ছা আমি বাসায় কথা বলবো। কিন্তু তাই বলে তুই যদি বাসায় আসা বন্ধ করে দিস তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।
- আচ্ছা আপু ঠিক আছে। কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো।
-হইছে এতো ফরমালিটি করতে হবে না।
সাকিবের সাথে কোণো কথা না বলেই এতো কিছু করে ফেললাম এরপর যদি ও পড়াতে না চায় তখন কি হবে এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার দিকে রওনা হলাম।

পর্ব ১ পড়তে এখানে.... ক্লিক করুণ

সবসময় আপডেট পেতে Fahim Rifat লাইক বাটনে ক্লিক করে রাখুন

Comments

Popular posts from this blog

Less is More : The way of Minimalistic Lifestyle

একজন মুমিনের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ

চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে