একাকিত্বের অন্তরালে || পর্ব ১ || ekakitter ontorale by Fahim Rifat
১
গল্পের শুরুটা যেখানে গল্প আসলে সেখানেই শুরু হয় নি। ছেলেটার নাম সাকিব বর্তমানে সে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ছে। মেধাবীদের প্যারামিটারে তাকে মেধাবী বলা চলে না কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত একটা ছেলে। মেধাবীদের পারামিটারে তাকে মেধাবী না বলার কারণ হলো তার এই ৫/৬ বছরের পড়াশুনার জীবনে কোণো এ+ এর রেকর্ড নেই। এ+ যেনো তার কাল শত্রু। খুব ভালো নাম্বার পাবে সব সাব্জেক্টে এর মধ্যে দেখা যাবে কোণো একটা সাব্জেক্টে এতো খারাপ নাম্বার পাবে তার সাথে সাথে তার এ+ পাওয়াটাও হয়ে ওঠে না। তাই আজকাল সে পরীক্ষা দিয়ে বলে না যে এ+ পাবে কারণ সে এখন এতটুকু নিশ্চিত যে পরীক্ষা ভালো হলেও সে এ+ পাবে না। তাহলে তাকে বুদ্ধিদীপ্ত বলছি কেনো সেইটা তার একাকিত্বের জীবন সম্পর্কে পড়লেই জানতে পারবেন।
..
সাকিবের আম্মা রাবেয়া সুলতানা একজন পাকা গৃহীনি। আমি তার মত সাংসারিক আর একহাতে এতকাজ সামলাতে পারা মানুষ কম দেখেছি। আমার কাছে তিনি বেশ একটা সম্মানের জায়গা দখল করে বসে আছেন। একবার সাকিবদের বাসায় গিয়েছি ভরদুপুরবেলা। গরমে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা এরকম অবস্থাতেই কলিং বেল দিলাম আন্টি ওপাশ থেকে দরজা খুলে দিলেন। আমি সালাম দিতেই –
-আন্টি আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা তুমি কেমন আছো? কোনো খবরই তো নাই তোমার আজকাল আর বাসায় তেমন আসো না।
এই বলেই আন্টি চলে গেলেন রান্নাঘরে সম্ভবত রান্না করছিলেন তাই বেশ ব্যস্ততা নিয়ে রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। কিন্তু আমার ধারণা এতোটা ভুল হবে ভাবতে পারিনি। তিনি রান্না করছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি রান্নাটা বাসার কাজের মেয়ের হাতে দিয়ে এক জগ গ্লুকোজ গুলিয়ে নিয়ে আসলেন –
- সাকিবকে বাইরে পাঠিয়েছি ডাল কিনতে। বাইরে যে গরম পড়েছে। তুমি গ্লুকোজ খাও আর টিভি ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছি টিভি দেখতে থাকো একটু পরেই সাকিব চলে আসবে।
..
আমি যথারীতি টিভি দেখছিলাম তখন আমাদের বাসায় ডিশ লাইন না থাকলেও সাকিবদের বাসায় ছিলো। বেশ জাকজমক চাকচিক্যে পরিপূর্ণ সাকিবদের বাসা। সাকিবের ঘরে এসি লাগানো ঘরে বেশ বড় ফ্লাট টিভি। এই ফ্লাট টিভিগুলা তখন বাজারে নতুন এসেছে। আমিও মাঝে মাঝে এসির ঠান্ডা অনুভব করতে চলে আসতাম সাকিবকে সময় দিতে কারণ এতো চাকচিক্য মোড়ানো হলেও সাকিবকে কখনোই আমার খুব একটা হাসি খুশি মনে হতো না খুবই চুপচাপ প্রকৃতির একটা ছেলে। সবসময় ওদের বাসায় আমার আসা যাওয়া থাকার কারণে আন্টি খুবই ভালো জানতেন আমাকে। আমিও যথেষ্ট সম্মান করতাম তাদের কিন্তু সাকিবের আব্বুর কথা বার্তা আমার খুব একটা সুবিধার মনে হইতো না। তিনি হয়ত আমাকে পছন্দ করতেন না । তার কারণও হয়তো ছিলো কিছু।
..
সাকিবের বাবা আব্দুল গফফার সাহেব জেলার এ সি ল্যান্ড অর্থাত সোজা বাংলায় যাকে বলে জেলা ভুমি অফিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। সরকারী কোয়ার্টার পাওয়া সও্বেও তিনি তাতে না থেকে বাসা ভাড়া করে থাকেন। তার ধারণা ছোট জাতের মানুষের সাথে থাকলে তার ছেলে খারাপ হয়ে যাবে। তিনি অফিসের বড় কর্মক্ররতা হলেও বাসায় সবাইকে খুব একটা সুখে রাখতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। বেশ রোবট প্রকৃতির একজন মানুষ। এভাবে মানুষের জীবন চলতে পারে তাকে না দেখলে জীবনে বিশ্বাসই করতে পারতাম না। তিনি সবসময় চাইতেন তার ছেলে তার মতই বড় অফিসার হবে কিন্তু তার এই একগুয়েমি তাকে এটা ভুলিয়ে দিয়েছিলো যে সব মানুষ একরকমভাবে জীবনযাপন করতে পারে না। যার বড় একটা প্রভাব পরেছিলো সাকিবের জীবনেও। সাকিবের জীবন ছিলো একরকম গদবাধা জীবন কারো সাথে মেশা মানা, বাইরে যাওয়া মানা একটা মানুষ একা একা কিভাবে থাকতে পারে সারাদিন ঘরের মধ্যে। হ্যা বর্তমানের ছেলেমেয়েগুলা ঠিকই পারে ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়েরা যে পরিমানে প্রতিযোগিতায় নেমে পরে ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর প্রচেষ্টায়। এদের প্রশিক্ষনও চলে সেইভাবে। আমার আবার এইসব গদবাধা জীবন পছন্দের না একটা মানুষ নিজে কি হতে চায় তার ওপর কোনো গ্রাহ্য না করে তার ওপর অন্য জগত চাপিয়ে দেওয়ার কোণো মাহাত্য নেই।
..
পর্ব ২ পড়তে এখানে..... ক্লিক করুন
সবসময় আপডেট পেতে Fahim Rifat পেজের লাইক বাটনে ক্লিক করে রাখুন।
nice vai....best of luck
ReplyDelete